SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - চারু ও কারুকলা - NCTB BOOK

পাটের তৈরি ফারুশিলএ অধ্যায়ে আমরা শিল্পকলার কিকৃত জগৎ এবং শিল্পের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ নিয়ে সংক্ষেপে জানা। বিভিন্ন নিজের সাথে চারু ও কারুকলার সম্পর্ক এবং নান্দনিক ও কারুশিল্প সম্পর্কে এ অধ্যারে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

শিল্পী কামরুল হাসানের আঁকা লাইওয়ু'

এই অধ্যায়ে পড়া শেষে আমারা যা জানবো 

 ● শিল্পকলা সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করতে পারব।

● শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করতে পারব।

* শিল্পকলার বিভিন্ন শাখার সাথে চারু ও কারুকলার সম্পর্ক নির্ণয় করতে পাৱৰ ।

• নান্দনিক শিল্প, লোকশিল্প ও কারুশিল্প সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে পারব।

• উল্লেখিত শিল্পগুলোর ব্যবহারিক ক্ষেত্রসমূহের একটি তালিকা তৈরি করতে পারব।

পাঠ : ১
শিল্পকলা সম্পর্কে ধারণা

শিল্পকলার উদ্ভব হয়েছে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে সেই আদিম মানুষের হাত ধরে। হোমো সাপিয়েন্স মানুষ তার চারপাশে যা দেখেছে তা-ই তার শিল্পমাধ্যমে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। হোমো সাপিয়েন্স কথাটার অর্থ হচ্ছে বুদ্ধিমান মানুষ। আজ থেকে ৪০ বা ৫০ হাজার বছর আগে ইউরোপে এই নতুন শিকারি মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল। বিভিন্ন শিকারের দৃশ্য ও জীবজন্তুর ছবি তারা সবচেয়ে বেশি এঁকেছে। সেখান থেকেই শিল্পকলার শুরু, তবে এখন শিল্পকলা একটি বিস্তৃত বিষয়। মানুষের মনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সামগ্রিক রূপ হচ্ছে শিল্পকলা। শিল্পী তাঁর কল্পনা ও প্রতিভার সাথে দক্ষতা ও রুচির সমন্বয়ে শিল্প সৃষ্টি করেন। শিল্পী তাঁর সৃষ্টির আনন্দ থেকে শিল্প সৃষ্টি করেন বলে কোনো বাঁধাধরা নিয়মের অধীনে শিল্পকে ফেলা যায় না। শিল্পীর কাজ হচ্ছে শিল্পকলার মাধ্যমে আমাদের অন্তর্দৃষ্টিকে সম্প্রসারিত করা, আমাদের কল্পনার পরিধি বাড়িয়ে তোলা ।

শিল্পকলার নানা দিক

শিল্পের প্রধান দুটি ধারা হচ্ছে চারুশিল্প (Fine Arts) ও কারুশিল্প (Crafts)। চারুশিল্প শিল্পীর সৃষ্টিশীল মনের একান্ত নিজস্ব সৃষ্টি। এর কোনো ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা নেই। সৃষ্টির আনন্দে মনের তাগিদ থেকেই তার উৎপত্তি। এটি আমাদের মনে আনন্দ যোগায়, দৃষ্টিকে আনন্দ দেয়। যেমন ধরো একটি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি দেখে বা কোনো একটি শিল্পকর্ম দেখে তোমার মন ভরে গেল। মন ভালো হলে পড়াশোনাও ভালো লাগবে। মনে আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবে। এভাবে চারুশিল্প আমাদের মানসিক প্রয়োজনে কাজে লাগে। আর কারুশিল্প যদিও শিল্প, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর উৎপত্তি জীবিকা অর্জনের তাগিদে এবং মানুষের ব্যবহারিক প্রয়োজন থেকে। সুতরাং বলা যায়, আমাদের মানসিক প্রয়োজন মেটায় যে- শিল্প তা হলো চারুশিল্প বা চারুকলা এবং যে- শিল্প দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক প্রয়োজনে কাজে লাগে, পাশাপাশি মনের আনন্দ জোগায় তা হলো কারুশিল্প বা কারুকলা। সমগ্র শিল্পকলা এই দুটি প্রধান ধারার অন্তর্ভুক্ত। মানুষের সৃষ্টি সমস্ত শ্ৰেষ্ঠ শিল্পই চারুশিল্পের অন্তর্গত। চারুশিল্পের মধ্যে আছে চিত্রকলা, ভাস্কর্য, খোদাই শিল্প, নৃত্যনাট্য, নাটক, কাব্য, গদ্যসাহিত্য, সংগীত, নৃত্য ইত্যাদি। অন্যদিকে কারুশিল্পের মধ্যে আছে মৃৎশিল্প, বুনন, তাঁত, চর্ম, বাঁশ, বেত, কাঠ ও নানারকম ধাতুর তৈরি ব্যবহারিক শিল্প ।

আবার নকশিকাঁথা, নকশি পাখা, খেলনা পুতুল এজাতীয় শিল্পকে আমরা লোকশিল্পের পর্যায়ে ফেললেও এগুলো কারুশিল্পের ধারায় সৃষ্টি। সাধারণ মানুষ মনের আনন্দ নিয়েই এ- সমস্ত শিল্প তৈরি করে। চারুশিল্পের অন্তর্গত প্রতিটি শিল্পই আবার একটি অন্যটির সাথে কোনো-না-কোনোভাবে সম্পর্কিত। এ- বিষয়ক অন্যান্য বইপুস্তকে তোমরা শিল্পকলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে ।

দলীয় কাজ : আমাদের মানসিক বিকাশ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে শিল্পকলা কী ভূমিকা রাখে?

পাঠ : ২
নান্দনিক শিল্প

এই পাঠে আমরা নান্দনিক শিল্প বা চারুশিল্পের অন্তর্গত চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও খোদাইশিল্প সম্পর্কে সংক্ষেপে জানব । 

পূর্বের পাঠে আমরা চারুকলা সম্পর্কে জেনেছি। নান্দনিক শিল্প আসলে চারুশিল্পেরই অন্য নাম। চারুশিল্প আমাদের মনকে আনন্দ দেয়, দৃষ্টিকে আনন্দ দেয়। যে শিল্প আনন্দদায়ক ও দৃষ্টিনন্দন, যা আমাদের মনের খোরাক যোগায় তাকেই আমরা নান্দনিক শিল্প বলতে পারি । নন্দন শব্দ থেকে নান্দনিক শব্দের উৎপত্তি। স্বর্গের উদ্যানকে বলা হয় নন্দনকানন। নন্দন শব্দটি সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত হয়। 

শিল্পী যখন কোনোকিছু সৃষ্টি করেন তখন তাঁর সৃষ্টির সাথে মিশে থাকে শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, তাঁর রুচি, চিন্তা-চেতনা, শিল্পবোধ, তাঁর পরিবেশ ও সমাজ ইত্যাদি নানা কিছু। শিল্পী তাঁর আবেগ, আনন্দ, দুঃখ, ক্ষোভ এসব অনুভূতিকেই শিল্পরূপ দেন। দুঃখ-বেদনা থেকেও শিল্পসৃষ্টি হতে পারে। তবে তাতে মিশে থাকে সৃষ্টির আনন্দ। দুঃখকে শিল্পে প্রকাশ করার আনন্দ। এসব শিল্পসৃষ্টির মূলে থাকে শিল্পীর নিজেকে প্রকাশ করার অদম্য ইচ্ছা। শিল্পী চান দর্শক তাঁর শিল্পকর্ম দেখে আনন্দ পাক, শিল্পীর চিন্তাভাবনার সাথে দর্শক নিজের চিন্তার মিল খুঁজে পাক অথবা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দর্শকের হৃদয়কে আলোড়িত করুক। দর্শক তাতে চিন্তার কিছু খোরাক পাক। শিল্পী নিজেকে প্রকাশ করার জন্য যে-কোনো মাধ্যম বেছে নিতে পারেন। সেটা হতে পারে চিত্রকলা, ভাস্কর্য বা অন্য কোনো মাধ্যম। চিত্রকলার মতো ভাস্কর্য, কাঠখোদাই বা রিলিফ ওয়ার্ক-এর মাধ্যমেও নান্দনিক শিল্প হতে পারে। মাধ্যম যা-ই হোক এ-ধরনের শিল্পকে আমরা নান্দনিক শিল্প বলতে পারি। যেমন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা ছবি— ‘সংগ্ৰাম’।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা— ‘সংগ্রাম'

এই ছবিটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামকে তুলে ধরেছে। চিত্রকলার মাধ্যমে যেমন নান্দনিক শিল্প হয় তেমনি ভাস্কর্যের মাধ্যমেও হতে পারে। আমাদের দেশে ও বিদেশে প্রচুর ভাস্কর্য রয়েছে যা কোনো বিষয়কে নিয়ে শিল্পীর মনের অনুভূতিকে মানুষের মাঝে তুলে ধরেছে। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থিত ‘অপরাজেয় বাংলা’। এই ভাস্কর্যটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থিত ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ-এর তৈরি 'অপরাজেয় বাংলা'

যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণসহ মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিকে প্রকাশ করেছে। একইভাবে কাঠখোদাই বা ৱিলিক করা কাজের মাধ্যমেও হতে পারে নান্দনিক শিল্প।

কাজঃ কাকর্ষের মাধ্যমে নান্দনিক শিল্প তৈরি করা স, এ বিষয়ে তোমার মতামত তুলে ধর।

 २ - চি বলব? তোমার মতামত ও

পাঠঃ ৩ 

কারুশিল্প 

ইতঃপূর্বে আমরা চারুশিল্প ও কারুশিল্পের পার্থক্য সম্পর্কে জেনেছি। ব্যবহারিক করতে সৌন্দর্য আরোপ করার মধ্য দিয়ে কারুশিল্পের সূচনা, আমরা ভাও জেনেছি। সকল ব্যবহারিক ককুই কারুশিল্প নয়। শুধুমাত্র যেসকল ব্যবহার্য সামগ্রী শিল্পপুণসম্পন্ন অর্থাৎ যা কারুকার্যখচিত অথবা নির্মাণশৈলীর কারণেই মনোমুদ্ধকর তাকেই আমরা কারুশিল্প বলতে পারি। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ যা সৃষ্টি করে তার প্রাথমিক রূপটি হয় খুব সরল । যেমন আমরা যদি আদিমকালের বিভিন্ন হাতিয়ার বা বাসনপত্রের ছবি দেখি, দেখা যাবে সেগুলো খুব সহজ এ সরলভাবে তৈরি। কেবল ব্যবহারিক প্রয়োজনের কারণেই সেটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে সৌদর্যবোধ ও রুচিবোধের প্রয়োজনে সে সকল হাতিয়ার বা বাসনপত্রই মানুষ অনেক সুন্দর ও মনোমুলক ভাবে তৈরি করে তাকে শিল্পরূপ দিয়েছে। তখনই সেটা হয়েছে কারুশিল্প।

পাটের তৈরি ফারুশিল

মানুষ তার জীবনবাপনকে সুন্দর করার জন্য, সুখে আনন্দে বসবাস করার জন্য শিল্প কর্মের নানাভাবে ব্যবহার করে। গ্রামের সাধারণ পরি কৃষক বা শ্রম ও জন দিয়ে যথাসম্ভব সুন্দর করে তৈরি করার চেষ্টা করে। দরজা, य বাধ দিয়ে নানারকম করার চেষ্টা করে। এর কারণ সব মানুষের মনেই সৌন্দর্যবোধ থাকে। আর সে তার জীবনযাপনে ঐ সৌন্দর্যবোধের প্রয়োগ করতে চায়। আবার গাঁয়ে যারা অর্থশালী, তাদের বাড়িঘর পরিপাটি করে সাজানো থাকে। কাঠের দরজা, জানালায় থাকে কাঠ খোদাই করা, উঁচু উঁচু হয়ে থাকা নানারকম নকশা, ফুল, পাখি ও লতাপাতার ছবি। তাদের বাড়িতে ব্যবহৃত খাট, পালং, চেয়ার, টেবিল, নানারকম আসবাবপত্র, বেত ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীতে নানারকম কারুকাজ করে সেগুলোকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়। শহরের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তরাও কারুশিল্পকে নানাভাবে ব্যবহার করেন তাঁদের জীবনযাপনে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীর প্রায় সবই কারুশিল্পের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কারুশিল্প আমাদের সবার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।

কাজ : তোমার বাসায় বা বাড়িতে ব্যবহৃত হয় এরকম ৫টি কারুশিল্পের নাম লেখ 

পাঠ : ৪ 

লোকশিল্প 

লোকশিল্প মূলত কারুশিল্পের ধারাতেই তৈরি শিল্পকর্ম, যেমন কুমার যখন মাটির হাঁড়ি, কলসি ইত্যাদি বানায়, তখন তা কারুশিল্প। এই হাঁড়ি-পাতিলে রং করে তাতে নকশা বা ছবি এঁকে যখন একে শখের হাঁড়ি বানানো হয়, তখন হয় লোকশিল্প। তবে লোকশিল্পের সাথে কারুশিল্পের পার্থক্য হলো, কারুশিল্প দক্ষ কারিগরের তৈরি এবং তা ব্যবহারিক প্রয়োজন মেটায়। অন্যদিকে লোকশিল্প সাধারণ মানুষের তৈরি শিল্পসামগ্রী। যেমন গ্রামের সাধারণ মেয়েদের তৈরি নকশিকাঁথা। কাঁথায় সুতার ফোঁড়ে অত্যন্ত যত্ন ও আবেগ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় ছবিগুলো। নকশিকাঁথার ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা আছে। আবার মাটি টিপে টিপে যেসব হাতি, ঘোড়া পুতুল ইত্যাদি বানানো হয় বা কাঠের তৈরি ছোটবড় হাতি, ঘোড়া ইত্যাদি লোকশিল্পের কোনো ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই বলা যায় লোকশিল্পের ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। গাঁয়ের মেয়েদের তৈরি রঙিন সুতা, পাট বা পাটের রশি দিয়ে বোনা বিভিন্ন শতরঞ্জি, জায়নামাজ, শিকা ইত্যাদি লোকশিল্পের অন্তর্ভুক্ত। লোকশিল্পীদের আঁকা বিভিন্ন পট, সরা ইত্যাদি ছাড়াও নকশি পিঠা, নকশি পাখাসহ বহু লোকশিল্প আমাদের সংস্কৃতিকে উজ্জ্বল করেছে।

 
কাজ : কারুশিল্প এবং লোকশিল্পের মিল ও অমিল সম্পর্কে ৬টি বাক্য লেখ ।

 

Content added By
কুৎসিত অর্থে
শৌখিন অর্থে
সুন্দর অর্থে
সামাজিক অর্থে
Please, contribute to add content into বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content
কুৎসিত অর্থে
শৌখিন অর্থে
সুন্দর অর্থে
সামাজিক অর্থে
Please, contribute to add content into সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন.
Content